ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি এবং স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশসমূহের রাষ্ট্রনীতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত অর্ধ শতকে বিষয়টি নিয়ে তাত্ত্বিক পর্যায়ে যেমন আলােচনা হয়েছে অনেক, তেমনি বিবর্তন ঘটেছে উন্নয়ন সম্পর্কে মূল ভাবনাতেও। দারিদ্র্য হ্রাস, অসাম্য এবং কর্মসংস্থান এসব বিষয়ে সাফল্য নিয়েও বিতর্ক হচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে এবং বিশ্বায়নের প্রক্রিয়াও দ্রুততর এবং ঘনীভূত হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই প্রক্রিয়া। কী অবদান রাখছে সে প্রশ্ন এসে যাচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই। তবে পাশাপাশি রয়ে গেছে। উন্নয়নের গােড়ার প্রশ্ন: কৃষি ও শিল্প খাতের ভূমিকা। শুধু এই দুটি খাত নয়, গ্রামীণ কৃষিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড এবং সেবা খাত উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখতে পারে সেই প্রশ্নও উঠে এসেছে। উন্নয়ন ভাবনায় বিবর্তন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের বিভিন্ন তত্ত্ব, এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন খাতের ভূমিকা নিয়ে গড়ে উঠেছে বর্তমান গ্রন্থের মূল কাঠামাে। সেই কাঠামােকে ঘিরে আলােচনায় এসেছে দারিদ্র্য, অসাম্য, কর্মসংস্থান, এবং বিশ্বায়নের মত বিষয়গুলি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের ভূমিকাও আলােচিত হয়েছে। গ্রন্থটির সর্বত্রই প্রাসঙ্গিক। তত্ত্বের সাথে উদাহরণ এবং ব্যাখ্যা হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের অভিজ্ঞতা টেনে আনা হয়েছে। তবে শেষ অধ্যায়টি রচিত হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে কেন্দ্র করে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে উৎসাহী সাধারণ পাঠক, উন্নয়ন কর্মী, নীতি নির্ধারক, গবেষক, এবং ছাত্র-শিক্ষক সকলের কাছেই গ্রন্থটি সমাদৃত হবে বলে আমরা মনে করি।
রিজওয়ানুল ইসলাম অর্থনীতিবিদ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এমপ্লয়মেন্ট সেক্টরের প্রাক্তন বিশেষ উপদেষ্টা। সংস্থাটির বিভিন্ন বিভাগে পরিচালক ছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে অতিথি বক্তা এবং ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে অধ্যাপনা এবং গবেষণা করেছেন। অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। শিক্ষাজীবনের সকল স্তরে প্রথম স্থান অর্জন করার বিরল কৃতিত্বের অধিকারী ড. ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিক্স থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। উন্নয়ন অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়ে ড. ইসলাম গ্রন্থ রচনা এবং সম্পাদনা করেছেন। বিশ্বের প্রথম শ্রেণির গবেষণা-সাময়িকীসমূহে এবং বিভিন্ন গ্রন্থে তাঁর গবেষণামূলক রচনা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর অতিসাম্প্রতিক বই ফুল অ্যান্ড প্রোডাকটিভ এমপ্লয়মেন্ট ইন ডেভেলপিং ইকোনোমিজ লন্ডনের রাউটলেজ কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। ইউপিএল ইতিপূর্বে প্রকাশ করেছে বাংলায় লেখা তাঁর আরেকটি বই উন্নয়ন ভাবনায় কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজার। এ ছাড়া ইউপিএল প্রকাশিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা: সুবর্ণজয়ন্তীতে ফিরে দেখা গ্রন্থের তিনি যুগ্ম-লেখক।